নারী দিবস (ছোট গল্প)
আরে ছাড় ছাড়, করছিস কী? চোখ বন্ধ করে কোথায় নিয়ে যাবি?তুমি চলই না মা আমার সঙ্গে।মধুমিতার মেয়ে অর্না মায়ের চোখ দুহাতে চেপে ধরে রান্না ঘর থেকে মায়ের শোবার ঘরে নিয়ে আসে।চোখ খুলে বিছানার উপরে হারমোনিয়াম দেখে চোখ জলে ভরে আসে মধুমিতার।এটা কে আনলো? অনুসারে তুই এনেছিস? তুই জানিস না কিছু!?নিয়ে যা এখান থেকে ; বলতে বলতে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ঘুরতে গিয়ে ধাক্কা খায় মধুমিতা; পিছনে তার শ্বশুর মশায় আর শাশুড়ি মা দাঁড়িয়ে।দেখুন মা আপনার নাতনীর কান্ড। আমি নাকি বুড়ো বয়সে গান গাইব। মধুমিতা ওর শাশুড়ি কে উদ্দেশ্য করে বলে।কেন বৌমা, দিদি ভাই অন্যায় তো কিছু করে নি। বরং ও যেটা করতে পেরেছে আমরা বলতে আমাদের ছেলে কেন করতে পারে নি সেটাই ভাবছি।যে গান শুনে মুগ্ধ হয়ে আমি তোমাকে আমার বৌমা করে এনেছিলাম সেই গানকে আমি রক্ষা করতে পারিনি ঠুনকো আভিজাত্যের মিথ্যা অহংকারের হাত থেকে।বৌমা তুমি আমাকে ক্ষমা করো বলে মধুমিতার দুই হাত ধরে মধুমিতার শ্বশুর মশায়। বলেন তুমি আজ থেকেই শুরু করো।বাবা আপনি বলছেন একথা! অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে মধুমিতা।বড্ড ভুল করে ফেলেছি তোমাকে তোমার ভালোলাগা, ভালোবাসার জায়গা থেকে দূরে রেখে।এইসময় অর্না বলে ওঠে ঠাম্মা আজ তোমার জন্যও উপহার আছে----- এই দ্যাখো ; বলে একটা মাউথ অর্গান দেয় ঠাম্মার হাতে।ঠাম্মা তরুবালা দেবী অবাক হয়ে বলে তুই কী করে জানলি? এতো তোর বাবাও জানে না।বুড়ি তুমি আমাকে যতই অবজ্ঞা করো না কেন নাতনী বলে; আমি তোমার সব খবর রাখি।নাতনীকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন----- বলেন না দিদিভাই তুই আমার সাত রাজার ধন।আজ তোর জন্যই আমরাও সংসারে নিজের আনন্দে বাঁচতে পারবে।আজ আমার নারী দিবস সার্থক। যেদিন থেকে তোমাদের এই ভালোলাগা, ভালোবাসার কথা জানতে পেরেছি সেই দিন থেকে শুধু ভেবেছি কবে তোমাদের আবার সেই খুশি ফিরিয়ে দেব।সকল নারীর কাছে সেদিন নারী দিবস সার্থক হবে যেদিন নিজের আনন্দকে বুকে লুকিয়ে না আনন্দকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচবে। --- বলতে বলতে অর্না মা আর ঠাম্মাকে জড়িয়ে ধরে।দূরে কোথাও বেজে ওঠে নহি দেবী, নহি সামান্য নারী,পূজা করি মোরে রাখিবে উর্দ্ধেসে নহি নহি,হেলা করি মোরে রাখিবে পিছেসে নহি নহিযদি পার্শ্বে রাখ মোরেসংকটে সম্পদেসম্মতি দাও যদি কঠিন ব্রতেসহায় হতেপাবে তবে তুমি চিনিতে মোরে।